• ই-আলু ডট কম, লোভনীয় ক্যাশব্যাক এবং একটি যুগান্তকারী বিজনেস মডেল

    আমি এই পোস্টে কোন কোম্পানির নাম নিবো না। শুধু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বিষয় শেয়ার করবো। প্রথম আলোর একটা নিউজে একটা কোম্পানিকে “ডিজিটাল এমএলএম” / “ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদ” বলা এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে সেই কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে তদন্ত এবং ব্যাংক হিসাব জব্দ হওয়ার পর অনেকেই অনেক অনেক রকম তত্ত্ব নিয়ে হাজির হচ্ছেন এই বিজনেস মডেলটা নিয়ে। এইসব তত্ত্ব বিশ্লেষণ আগেও হতো। যেহেতু এখানে কেউ কেউ লাভবান হয়, তার পক্ষে কথা বলার লোকের অভাব হওয়ার কথা না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের “নিরপেক্ষ” স্পেশালিষ্ট তাদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন এবং “দেশী ই-কমার্স”, “দেশী উদ্যোক্তা” ইত্যাদি বিশেষণ প্রয়োগ করে প্রচুর আবেগ ছড়াচ্ছেন। যাই হোক, কারো আবেগ ধারণের অতিরিক্ত হয়ে গেলে ছড়াতেই পারে, সেটাতে আমার আপত্তি নাই। আমার আপত্তি হলো, উনাদের কেউ কেউ আবার পাল্টা কুযুক্তি দিচ্ছেন এই বলে যে, মানুষ নাকি তাদের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে এটার সমালোচনা করছে। লাভের গুড় খাওয়া লোকজন বলুক আমার আপত্তি নাই, কিন্তু বিশেষজ্ঞ নামধারী এইসব লোক যখন বলেন, তখন বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিতে হয়! তাই আমার আজকের পোস্টের টপিক কোন কোম্পানির বিরুদ্ধে না। আমি শুধু এই বিষয়টা আমার অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরতে চাই, যারা এইসব ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে বলেন, কেন বলেন!

    প্রথমেই একটা বিষয়ে আসি, এইসব ইকমার্সকে কেন এমএলএম এর সাথে তুলনা করা হচ্ছে? এটা বুঝতে হলে প্রথমে আপনাকে এমএলএম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকতে হবে। বেশি না, শুধু ডেসটিনি বা এইরকম কোন কোম্পানির একটা সেমিনারে গিয়ে থাকলেই হবে। এইসব সেমিনারে ডান হাত বাম হাত কোটি কোটি টাকার স্বপ্ন দেখানোর আগে প্রায় সবাই একটা লাক্স সাবানের গল্প বলতেন। বাজারে একটা লাক্স সাবানের দাম কতো? ১৪ টাকা (এখন ২২ টাকা মনে হয়), আপনি কি জানেন সেই লাক্স সাবানের উৎপাদন খরচ মাত্র ২ টাকা? তাহলে বাকি ১২ টাকা কোথায় যায়? এগুলা সব বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে যায়। সবশেষে আপনি যেটা বুঝবেন এই কোম্পানি উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য এনে সরাসরি আপনার হাতে তুলে দিবে তাহলে এই যে ১২ টাকা আগে বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগীরা পেতো, সেগুলোই এখন কমিশন হিসেবে **কাস্টমারদেরই** দিয়ে দিবে। এই কথাগুলোর সাথে সাময়িক কোন বিবেকবান “দেশি ই-কমার্স” প্রেমীর কথার সাথে মিল পাচ্ছেন (PingDuoDuo or C2M)? মিল পাওয়াটা আপনার ভুল, কারণ এমএলএম এ তো তারা মার্কেটিং কমিশন পেতো। এখানে তো কোন মার্কেটিং কমিশনের সিস্টেমই নাই। কথা হচ্ছে ঘুরে ফিরে সেই কাস্টমারকেই লাভ দেয়া হচ্ছে, আগে দিতো কমিশনের মাধ্যমে, এখন দেয়া হবে কাশব্যাকের মাধ্যমে। এখানেই হলো একমাত্র পার্থক্য। যাই হোক, আমি আবারো বলে নিই, আমি বলছি না, আমাদের দেশের কোন নামধারী ই-কমার্স এই কাজ করছে। আমি শুধু আপনাদের বুঝাতে চাচ্ছি, কেন আমরা তাদেরকে এমএলএম এর সাথে মিলাচ্ছি।

    এবার আসেন, আমরা একটা বিজেনেস মডেল নিয়ে আলোচনা করি। আমি আবারো বলছি, বর্তমান কোন ব্যবসায়ী এই মডেলেই বিজনেস মডেল সাজিয়েছেন কিনা আমার কাছে সেটার ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। আমি শুধু আপনাদের দেখাতে চাই, এই ধরনের একটা বিজনেস মডেল হতে পারি কিনা। বাকিটা আপনারা যার যার বিবেচনায় বুঝে নিবেন।
    আমি চাইছি এই নিউ ডিজিটাল ইনভেনশনের মাধ্যমে আলু বিক্রি করবো। আমরা জানি আলু একটি সর্বজন প্রিয় খাদ্য যা সবসময় পাওয়া যায় এবং প্রায় সবার ঘরেই এটা থাকে। তাই দেশের ১৬ কোটি মানুষকে একটা প্লাটফর্মে আনার জন্য আলুর চেয়ে ভালো পণ্য হতে পারে না। তাই আমরা একটা ই-কমার্স সাইট করবো ই-আলু ডট কম। তো আলুর দাম বাজারে ৩০-৩৫ টাকা এখন। সেদিকে না যাই। ধরে নেই বাজারে আলুর দাম ২০ টাকা। আমি যেহেতু ভিন্ন একটা মডেল দাড় করাতে চাচ্ছি, আমি ২০ টাকায় আলু বিক্রি করবো না। ক্যাশব্যাকের হিসাবের অনেক মারপ্যাঁচ আছে, এখানে অঙ্কটা সহজ করার জন্য আমি ক্যাশব্যাক দিবো না। ধরুন ৫০% ডিস্কাউন্ট দিয়ে আমি প্রতি কেজি আলু ১০ টাকায় বিক্রি করবো। বাজারে আলুর কেজি ২০ টাকা, আমি দিবো ১০ টাকা, সাথে আবার বাসায় পৌঁছে দেয়া ফ্রি। মানুষ ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়ে তিন বেলা আলু খাওয়া শুরু করবে দেখবেন। যাই হোক, কথা সেইটা না। আমি ২০ টাকার আলু কিভাবে ১০ টাকায় বিক্রি করবো? বাজারে আলু ২০ টাকা হলে পাইকারি বাজারে হয়তো ১৫-১৬ টাকা পর্যন্ত নামতে পারে। হাই ভলিউমে কিনলে হয়তো সেখানে আরেক্টু কমে ১৪টাকায় আনা যাবে। তাও তো ৪ টাকা লস? চিন্তা নাই। ম্যাথ জিনিয়াস এর বিশ্ববিখ্যাত ম্যাথ মডেল আছে এর সমাধানের জন্য। খুব বেশি জটিল না বিষয়টা। শুধু দুইটা বিষয় আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।

    ১) প্রত্যেক কাস্টমারকে টাকা পাওয়ার এক মাস পরে আলু ডেলিভারি দিবেন।
    ২) প্রত্যেক মাসে আপনি আপনার নতুন অর্ডারের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। (এটার জন্য আপনাকে প্রাথমিকভাবে মার্কেটিং বাবদ কিছু খরচ করতে হবে। চিন্তা করবেন না, আপনার বিনিয়োগ শুধু এটাই। আর কোন খরচ আপনার করতে হবে না কথা দিচ্ছি)।

    এবার হিসাব শুরু করতে পারেন।

    প্রথম মাসঃ
    ধরি প্রথম মাসে অর্ডার পড়লো ১০০০ কেজি আলুর (এটা কম বেশি হলে সমস্যা নাই, দেখবেন দ্বিগুণ নিয়মে এটা কতো দ্রুত বাড়বে) । তো আমাদের হাতে চলে আসলো ১০০০০টাকা যদিও কোন আলু ডেলিভারি দিতে হচ্ছে না বলে খরচ নাই কোন। এই টাকা দিয়ে কিছু এক্সট্রা বিলবোর্ড কিনে রাখতে পারেন চাইলে।
    দ্বিতীয় মাসঃ
    নতুন অর্ডার ২০০০ কেজি। টাকা ২০০০০। আগের মাসের অর্ডার ছিল ১০০০ কেজির, সেগুলো কিনতে যাবে ১৪০০০, হাল্কা আর কিছু খরচ আছে, ধরলাম সব মিলিয়ে ১৫০০০। আমাদের হাতে রইলো আর ৫০০০ টাকা। এটা দিয়ে অনলাইনে কিছু মার্কেটিং করুন, পরের মাসে অর্ডার ডাবল করতে হবে না?
    তৃতীয় মাসঃ
    নতুন অর্ডার ৪০০০ কেজি। টাকা ৪০০০০। আগের মাসের অর্ডার ডেলিভারিতে খরচ হবে ৩০০০০টাকা। হাতে থাকবে ১০০০০। এটা দিয়ে একটা ফ্রি আলু ক্যাম্পেইন দিয়ে দিন কোম্পানির প্রচারের স্বার্থে! সমস্যা নাই। আপনার টাকা তো খরচ হচ্ছে না! 😉

    এভাবে চতুর্থ মাসে আপনার খরচ হবে ৬০০০০, প্রোফিট ২০০০০।
    পঞ্চম মাসে খরচ ১২০,০০০, লাভ ৪০০০০
    ৬ষ্ঠ মাসে খরচ ২৪০০০০, লাভ ৮০০০০
    এইভাবে ১২তম মাসে আপনার অর্ডারবাবদ আয় হবে ২ কোটি ৫ লক্ষ টাকা এবং খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে ৫২ লক্ষ টাকা। এবং পরের মাস থেকে আপনি কোটিপতি।
    তো এই সহজ অঙ্ক মিলাতে পারলে প্রায় বিনা পুঁজি থেকে শুরু করতে আপনি ১২ মাসে কোটিপটিতে পরিণত হতে পারবেন এবং দেশের অনেক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যের অভাব পূরণে অনবদ্য ভূমিকা রাখার জন্য দেশ বিদেশে সুনাম কুড়িয়ে আনতে পারবেন। তখন যদি কেউ আপনার ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে প্রশ্ন তুলতে আসে দেখবেন দেশের আপামর অভাবী লোক বলে উঠবে, অমুক ভাই না থাকলে আমরা দুইবেলা আলু খাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারতাম না।

    যাইহোক। এই সহজ অঙ্কে একটা বিষয় আপনারা খেয়াল করেছেন হয়তো। এখানে সব কটি অর্ডার নির্ধারিত সময়েই ডেলিভারি হচ্ছে। কারো সাথে কথার খেলাপ হচ্ছে না। তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন, এই বিজনেস মডেল ফলো করলে প্রত্যেকেই লাভবান হবে, কেউ লসে পড়বে না। কিন্তু কথা হচ্ছে, বাস্তবে তো আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক অর্ডার দেরিতে ডেলিভারি হয়, কেউ ছয় মাসেও পণ্য পায় না, ইনভয়েস নাম্বার নিয়ে মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করা লাগে ডেলিভারি পাওয়ার জন্য। এটা কেন হচ্ছে? এটার পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে, তবে সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে, আমাদের অঙ্কের দুই নাম্বার শর্ত অনুযায়ী প্রতি মাসে অর্ডার দ্বিগুণ করতে না পারা। তাহলে এটার সমাধান কি? এক্ষেত্রে একটা সুবিধা হলো আপনি এমন একটা দেশে বাস করেন যেটা বাটপারের স্বর্গ বলা যায়। এখানে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরির অফার দিয়ে অহরহ প্রতারণা করা হয়, দেখার কেউ নেই। রাস্তায় একটা জটলা পাকিয়ে মানুষের পকেট মারা হয়, কেউ কিছু বলার নাই। আপনিও এখানে একটু নিয়মের বাইরে গেলে সেটাও আর সমস্যা হবে না। যেটা করতে হবে, সবাইকে বলবেন এক মাস মানে ৩০ বিজনেস ডে। এরপর ৩০ বিজনেস ডে আপনি আপনার মতো শেষ করবেন। মানে যখন অর্ডার ডাবল হবে তখনই পরবর্তী মাসের অর্ডার ডেলিভারিতে হাত দিবেন, তার আগে না। এভাবে আগালে আপনার আর রিস্ক নাই। যদিও কোটিপতি হতে একটু সময় বেশি লাগবে এই আরকি! তাও কিছু সমস্যা থেকে যায়। এই যেমন ঘর ভাড়া তো আর এই সাইকেল এ ফেলা যাবে না, মাস শেষে তো বাড়িওয়ালাকে টাকা দেয়া লাগে। আবার কর্মীদের বেতনও দেয়া লাগবে। এতো টেনশন নিয়েন না, আরও অনেক ফাঁক ফোঁকর আছে, সেগুলা তো বলি নাই। এই যেমন আপনি আলু ওয়ালার কাছ থেকে আলু কিনবেন, তাকে কি সাথে সাথে টাকা দিয়ে দিবেন? তাকে বলবেন মাল বিক্রি করে টাকা দিচ্ছি। আপনি যখন এতো এমাউন্টের অর্ডার নিশ্চিত করবেন তখন তারা লাভের স্বার্থে অনেক টাকা বাকিতে দিবে। তাদেরকে ১৫-২০ দিনের সময় বেধে দিলেও আসলে কখন দিবেন সেটা আপনার ইচ্ছা। দেশে কি আলু ব্যাপারীর অভাব নাকি? একজন গেলে আরেকজন থেকে নিবেন। (মজার ব্যাপার হলো দ্বিতীয় ব্যাপারীও অর্ডার ভলিউম দেখে ঝাপিয়ে পড়বে, আগের ব্যাপারীর কি হলো সেটাও সে ভেবে দেখবে না।) এরপর সুযোগ বুঝে ই-লেবু, ই-কলা, ই-মরিচ এরকম আর কিছু সাইট খুলে লাভের পরিমাণ এবং (গুরুত্বপূর্ণ) ক্যাশ ফ্লো বাড়াতে পারেন।

    সবশেষে আসুন এবার একটা কথায়। উপরে আমরা যা দেখলাম সেখানে তো কাস্টমারের টাকা মাইর যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। ফর্মুলা অনুযায়ী আগালে সবাই যার যার পণ্য বুঝে পাবে আজকে নাহয় কালকে। তাহলে এইরকম একটা সিস্টেম যদি দেশের ক্ষুদাদারিদ্র্য দূরীকরণে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে ওইসব অতিজ্ঞানী নেটিজেনদের কি সমস্যা? তারা কেন এটার পিছনে উঠেপড়ে লেগেছে? (এখানে আমি আবারো মনে করিয়ে দিতে চাই, আমি এই পোস্টে কোন কোম্পানিকে সরাসরি উল্লেখ করে বলছি না, তারা এই মডেলে বিজনেস করছে, শুধু বলছি আমাদের মতো কিছু ব্যক্তিবর্গ তাদের বিজনেস মডেলকে এভাবে সন্দেহ করছেন বলেই এইসব কথার অবতারণা)। কথা হচ্ছে, যারা এইসব বলছে তারা বেশিরভাগই এদেশের অভাগা জাতির ধোঁকা খাওয়া দেখেছে বার বার। শুধু ডেসটিনি না, Dolancer, Unpay2U ইত্যাদি এমএলএম ছাড়াও শেয়ার বাজারের মতো বৈধ একটা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করেও মানুষকে পথে বসতে দেখেছে। এইসব ব্যবসায়ে কেউ ঠকবে না, যতদিন না একটা ভাটা আসে। এবং পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী সকল ব্যবসায়ে ভাটা আসে। যেইসব ব্যবসায়ের নিজস্ব কোন ভিত্তি থাকে, তারা সেটাতে টিকে যায়, আর যেসব ব্যবসা অন্যের টাকার উপর নির্ভর করে চলে, সেইসব ব্যবসা নিমিষেই ধ্বসে পড়ে। এখন এই যে আকাশে উঠে ধ্বসে পড়া, সেটা তো একা পড়বে না। সাথে নিয়ে পড়বে হাজার হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা। আপনারা যেইসব বিজেনেস এনালিস্টরা এসবে উৎসাহ দিচ্ছেন, তারা কি পারবেন এতো মানুষের কোটি কোটি টাকার গ্যারান্টি দিতে?

    FAQ 1: “তারা তো ভাই বুঝে শুনেই অর্ডার দিচ্ছে। আর নেটে এতো অভিযোগ তাদের নিয়ে এইসব জেনেও যারা অর্ডার করে, তাদের তো ধরা খাওয়াই ঠিক আছে। ”
    – আরে ভাই, এদেশের রাস্তায় ক্যানভাসাররা এখনো কিভাবে ধান্দাবাজি করে? বিকাশের প্রতারণার বিরুদ্ধে টিভিতে বিজ্ঞাপন দিয়েও কেন ঠেকানো যায় না? কারণ সবাই সব কিছু জানে না। যারা টিভিতে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন দেখে ওয়েবসাইটে এসে অফার দেখে পাগল হয়ে যাচ্ছে, তাদের সতর্ক করার জন্য কেউ নাই। আবার অনলাইনেও আমরা কিছু বললে পাল্টা বুদ্ধিজীবী হাজির হয়ে যায়। তখন নতুনরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়, কার কথা বিশ্বাস করবে। কিন্তু একসময় “স্বপ্ন পূরণ” এর কাছে নতি স্বীকার করে।

    FAQ 2: আচ্ছা, তো আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, ব্যবসায়ে কেউ ডিস্কাউন্ট ক্যাশব্যাক দিতে পারবে না? অমুক কোম্পানি তমুক কোম্পানি যখন ২০০% ক্যাশব্যাক দেয়, তখন তো আপনাদের কথা বলতে দেখা যায় না?
    – হুম। অমুক কোম্পানি যদি একি নিয়মে দিয়ে থাকে, তাহলে একি রকমের রিস্ক কাষ্টমারের থাকে। তবে সেটা যদি অলরেডি এস্টাব্লিশড কোম্পানি হয়, তাহলে আমাদের ভয়ের কারণ কম থাকে। তারপরও আপনাদের কিছু নিয়ম শিখিয়ে দিই, কোন কোম্পানি যখন ক্যাশব্যাক / ডিস্কাউন্ট অফার দিবে, সেটা কি তার প্রোডাক্ট এর থেকে ডিস্কাউন্ট দিচ্ছে নাকি আসলে অন্য কোন ভাবে আপনার কাছ থেকেই এটা বের করছে।
    ১) ইনস্ট্যান্ট ডিস্কাউন্ট অথবা ক্যাশব্যাকঃ আপনি যেকোন অর্ডার করার সময় ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক বা ডিস্কাউন্ট যদি পান তাহলে ভয়ের কারণ কম থাকে। (ক্যাশব্যাকের ক্ষেত্রে ৩ নং পয়েন্ট দ্রষ্টব্য)।
    ২) ডেলিভারি টাইমিংঃ অফারের জন্য তাদের ডেলিভারি টাইমে পরিবর্তন আসবে না। তার মানে হলো, অফার ছাড়া অর্ডারে যদি তারা ৩ দিন সময় নেয় ডেলিভারি করতে, অফারসহ অর্ডারেও তারা ৩ দিন সময় নিবে। যদি এমন হয়, তাহলে বিশ্বাসযোগ্য। আর যদি দেখা যায়, অফারের অর্ডারে অত্যধিক সময় নেয় (অনেক সময় বলেও দেয়, এতো ডিস্কাউন্ট এর জন্য একটু ওয়েট করতে পারবেন না?) তাহলে ঝামেলা আছে। আর যদি এমন হয় যে, তাদের অফার ছাড়া খুব একটা অপশনই নাই, তাহলে ৫ নং পয়েন্ট দ্রষ্টব্য।
    ৩) ক্যাশব্যাক লিমিটঃ যদি ক্যাশব্যাক অফার হয়ে থাকে, সেই ক্যাশব্যাক দিয়ে আপনি তাদের অন্য যেকোন পণ্য যেকোন সময় কিনতে পারবেন। এখানে কোন লিমিট থাকবে না। যদি এখানে বিভিন্ন ধরনের লিমিট থাকে, তাহলে বুঝতে হবে ঝামেলা আছে।
    ৪) সার্ভিসে তারতম্যঃ যদি এমন হয়, অফারের অর্ডার হওয়ার কারণে, আপনি সার্ভিসের ক্ষেত্রে দুর্বলতা পাচ্ছেন, যেমন প্যাকিং খারাপ বা ওয়ারেন্টি কার্ড মিসিং বা সাপোর্ট থেকে / ডেলিভারি ম্যান থেকে ভিন্ন ধরনের কথাবার্তা যাতে বুঝা যায়, “আপনি অফারে যা পাইছেন, তাই তো বেশি! চুপচাপ কেটে পড়েন!” তাহলে বুঝতে হবে এরা প্রফেশনাল না, ধান্দাবাজ।
    ৫) অফারভিত্তিক কোম্পানিঃ কোন কোম্পানি যদি বেশিরভাগ অর্ডার বা সব অর্ডার অফারেই বিক্রি করে, তাহলে তাদের বিজনেস মডেল এ সমস্যা থাকা খুব স্বাভাবিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *